আজকের তরুণ সমাজের প্রতিদিনের রুটিনের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক কিংবা ইউটিউব) স্ক্রল করতে করতে রাত কখন ভোর হয়ে যায়, কেউ খেয়ালই রাখে না। এই অনিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার শুধু সময় নষ্টই করে না, দীর্ঘমেয়াদে ঘুমের সমস্যা এবং মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের মতো বড় সমস্যা ডেকে আনে।
যেভাবে সমস্যা শুরু হয়ঃ
প্রথমে মনে হয়, “আরেকটু দেখেই ঘুমাবো।” তারপর সেই স্ক্রলিং কখন ২টা-৩টা বাজিয়ে দেয়, বোঝার উপায় থাকে না। আমাদের শরীরের ঘুমের প্রাকৃতিক ঘড়ি বা সার্কেডিয়ান রিদম এভাবে বিঘ্নিত হতে থাকে। পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম না হলে শরীর ও মন সারাদিন ক্লান্ত থাকে, কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়।
ঘুমের এই ঘাটতি ধীরে ধীরে মানসিক চাপের জন্ম দেয়—অনিদ্রা, উদ্বেগ, হতাশা আরও বেড়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্যের জীবন দেখে নিজের জীবনের তুলনা করা শুরু হয়, “ও তো কত সুখে আছে, আমি কেন পারছি না?”—এই চিন্তাভাবনাগুলো স্ট্রেস বাড়িয়ে তোলে।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যা হতে পারেঃ
যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তখন হতে পারে:
- ক্রনিক ইনসমনিয়া (দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা)
- উচ্চমাত্রার স্ট্রেস ও উদ্বেগ
- ডিপ্রেশন (অবসাদ)
- সোশ্যাল আইসোলেশন (একাকীত্বে ডুবে যাওয়া)
- একাডেমিক পারফরম্যান্স ও কর্মজীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব
- নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
অতিমাত্রায় ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ থেকে কখনও কখনও আত্মহত্যার চিন্তাও তৈরি হতে পারে- এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র।
সমস্যা সমাধানের উপায়ঃ
১. নিজেকে সচেতন করা:
- রাতের বেলা নির্দিষ্ট সময়ের পর মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করুন (Digital Detox)।
- ঘুমানোর আগে কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট স্ক্রিন-মুক্ত সময় রাখুন।
- বিছানায় মোবাইল নেবেন না।
- দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন, সারাদিন নয়।
২. ঘুমের রুটিন গড়ে তোলা:
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগার চেষ্টা করুন।
- ঘুমানোর পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক রাখুন।
- ক্যাফেইন ও ভারী খাবার রাতের বেলা এড়িয়ে চলুন।
৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:
- মেডিটেশন ও ডিপ ব্রিদিং অনুশীলন করুন।
- ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ বা হালকা হাঁটা ঘুমের আগে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- সময় করে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান।
যখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের (Psychologist) সাহায্য নেয়া উচিতঃ
- যদি টানা ২ সপ্তাহের বেশি ঘুমের সমস্যা থাকে।
- যদি ঘুমের সমস্যা ও স্ট্রেস দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব ফেলে।
- সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া থাকতে না পারলে এবং এটি থেকে মানসিক চাপ বাড়তে থাকলে।
- যদি হতাশা বা আত্মঘাতী চিন্তা মাথায় আসে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ যে ধরনের থেরাপি ব্যবহার করতে পারেঃ
- Cognitive Behavioral Therapy for Insomnia (CBT-I): ঘুমের জন্য অত্যন্ত কার্যকর থেরাপি।
- CBT for Anxiety/Depression: স্ট্রেস ও হতাশা দূর করতে সাহায্য করে।
- Mindfulness-Based Therapy: বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ ধরে রাখতে শেখায়।
- Digital Detox Program: মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে স্বাস্থ্যকর সীমা গড়ে তোলে।
তরুণ সমাজের সামনে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো সচেতনতা। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। ঘুমের গুরুত্বকে ছোট করে দেখলে চলবে না। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলতে দ্বিধা করবেন না। আপনার সুন্দর আগামী দিনের জন্য আজই পরিবর্তনের শুরু হোক।